সফল ব্যক্তিদের যে ১০টি অভ্যাস..

“সাফল্য” এটি কোন মরীচিকা নয়। সারাজীবন অধরা থেকে যাবে এমন কোন অসাধ্য বস্তুও নয়। তারপরও কেন আমাদের চারপাশে এত-এত মানুষ সারাজীবন হায়-হুতাশ করে যায় সাফল্যের দেখা না পেয়ে? কেন কবিতার সেই “দেখিস, একদিন আমিও!” কথাটা অনেকের জীবনে কোনদিন সত্যি হয় না? উত্তরটা খুব সহজ! বিন্দু-বিন্দু জলকণা থেকে যেমন ১টি বিশাল সমুদ্র হয়ে উঠতে পারে , তেমনি প্রতিদিন একটু-একটু সাধনা আর সংকল্পের ছোঁয়ায় একজন সাধারণ মানুষও মহান রূপে পরিণত হয়ে উঠতে পারেন। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, প্রতিভা বা মেধার দোহাই দিয়ে আসলে কিছুই হয় না। ইতিহাসের স্মরণীয় ব্যক্তিরা আমার আপনার মতই সাধারণ মানুষ ছিলেন। তারা প্রচেষ্টা আর সাধনায় ছাড়িয়ে গেছেন অন্যদের, প্রতিদিন একটু-একটু করে। একটুখানি উদ্যোগ নিলে আপনিও পারবেন একদিন তাদের কাতারে নাম লেখাতে। বিজ্ঞানীরা অনেক গবেষণা করে দেখেছেন। সফল মানুষদের নিয়ে। মানুষগুলাের পেশা, ভাষা, সংস্কৃতি, ভালবাসার জায়গাগুলােও ভিন্ন। কিন্তু ১টি ক্ষেত্রে তাদের দারুণ মিল রয়েছে। প্রতিদিন তারা ১০টি অভ্যাস অনুসরণ করে চলেন। তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক তাদের এই ১০টি অভ্যাস কী-কী 






১। সকাল-সকাল ঘুম থেকে উঠা 


শুনতে খুব বিরক্তকর মনে হতে পারে, কিন্তু মজার ব্যাপার হলাে অ্যাপল, ইয়াহু, স্টারবাক, ডিজনি সহ বেশিরভাগ বড়-বড় কোম্পানির CEO রাই খুব সকাল-সকাল কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ভােরবেলায় মস্তিষ্ক ও মন থাকে সতেজ। সূর্য উঠার আগেই কাজে নেমে পড়লে ঘুমন্ত পৃথিবীর থেকে অনেকটা এগিয়ে থাকা যায় প্রতিযােগিতায়। সফল মানুষরা এই সুযােগ কখনাে হাতছাড়া করে না । তাই তারা ভােরবেলাতেই ঘুমকে ছুটি জানিয়ে নেমে পড়েন কর্মপরিকল্পনায়। আর আজ তারাই সফল ব্যক্তিত্ব।








২। শরীরচর্চা 


 শরীর ১টা যন্ত্রের মতাে। নিয়মিত ব্যবহারের অভাবে যন্ত্র যেমন বিকল হয়ে পড়ে, তেমনি পরিমিত ব্যায়ামের অভাবে শরীরও হয়ে পড়ে স্থবির। অবসাদ দূর করতে এবং প্রানচাঞ্চল্য ধরে রাখতে ব্যায়ামের বিকল্প নেই। সফল মানুষরা প্রতিদিন সময় ধরে ব্যায়াম করেন। প্রখ্যাত লেখক “হারুকি মুরাকামি প্রতিদিন ১০ কি.মি. দৌড়ান এবং সাঁতার কাটেন। অন্যান্য সফল ব্যক্তিরাও শরীরচর্চার প্রতি যথেষ্ট গুরুত্বারােপ করে থাকেন। কারণ, “স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল”!! 







৩। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য তৈরি 


সাফল্যের শিখরে পৌঁছাতে হয় ধাপে-ধাপে, একটু-একটু করে। সেজন্য ছােট কিন্তু সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হয়। যেমন “আমি ক্লাসে ফাস্ট হবাে” ,এমন ভাবলেই তাে ফাস্ট হওয়া যায় না, ফার্স্ট হতে হলে কী-কী করতে হবে সেটা ঠিক করুন। ক্লাস লেকচারের নােটগুলাে ভালভাবে তুলােন। প্রতিদিনের পড়াটা প্রতিদিন শেষ করুন। এভাবে সুনির্দিষ্ট ছােট্ট-ছােট্ট লক্ষ্য পূরণ করতে করতেই ১ দিন বড় সাফল্যের দেখা পেয়ে যাবেন। 








৪। ছক ধরে কাজ করা 


 আমাদের একটা সমস্যা কমবেশি সকলেরই রয়েছে, সেটা হল “কোনটা ছেড়ে কোনটা ধরি”। বুদ্ধিমানরা তাই শুরুতেই কাজের গুরুত্ব অনুযায়ী প্ল্যান করে ফেলেন কোনটা আগে করতে হবে, কোনটা পরে। তারপর সে অনুসারে এগােতে থাকেন। প্রতিদিন যে কাজগুলাে অত জরুরী নয়, সেগুলাে পরে করলেও চলবে, প্রয়ােজনীয় কাজগুলাে ঝটপট সেরে নিলে অনেকটা সময় সাশ্রয় করা যায়। 








৫ । বইপড়া 

 
আপনি কি জানেন যে, সফল মানুষরা প্রতিদিন কত-কত বই পড়েন? ভাবতে পারেন, তাঁদের তাে ক্লাসে পড়া দেওয়ার ঝামেলা নেই, তাহলে কিসের জন্য বই পড়েন তারা? জ্ঞানের খােরাক মেটানাের জন্যই দিনের ১টি বড় সময় বইয়ের পাতায় মুখ খুঁজে কাটান তারা। আব্রাহাম লিঙ্কন, বিল গেটস, এমা ওয়াটসন সহ প্রমুখ ব্যক্তিত্ব আছেন,যাদের প্রতিদিন বই না পড়লে ঘুম হয় না। ১টি বইয়ের পাতায় পাতায় কত বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা, কত সহস্র মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার সুযােগ মেলে জগৎটাকে! 








৬। প্রস্তুতি


 “পাবলাে পিকাসাের” কাছে ১ বার এক মহিলা আবদার করলেন ১টি পােট্রেট এঁকে দিতে। তিনি তড়িৎগতিতে ৩০ সেকেন্ডে পােট্রেট এঁকে সেই মহিলা বললেন, “এর দাম ১০ হাজার ডলার” ! সেই মহিলা তাে অবাক “বলছেন কী আপনি! এত দাম! অথচ আপনার আঁকতে তাে সময় লেগেছে মাত্র ৩০ সেকেন্ড। পাবলাে পিকাসাে ওই মহিলাকে বললেন “কিন্তু এই ৩০সেকেন্ডে আঁকা রপ্ত করতে যে আমার সময় লেগেছে ৩০ বছর, তার দাম ১০ হাজার ডলার!” আপনি হয়তাে ভাবছেন যে- ক্লাসের সেরা ছাত্রটি কতই না মেধাবী, কতই না ভাগ্যবান। কিন্তু এই অবস্থানে পৌঁছাতে তাকে যে কত নির্ঘম রাত পাড়ি দিতে হয়েছে তার খবর ক’জন রাখি? প্রস্তুতি ছাড়া সাফল্য মেলে না। 









 ৭। সব কূল সামলে চলা 


সেই যে ১টা মজার কথা প্রচলিত আছে- সামাজিক জীবন, ঘুম আর পড়াশােনা ! এগুলাের যেকোন দুইটা সামলাতে গেলে অপরটা বজায় রাখা কষ্টকর। কিন্তু সফল মানুষরা এইরকম অনেক নৌকায় পা দিয়েও খুব সুচারুভাবে সবদিক সামলে চলেন। কিভাবে সম্ভব? ঐ যে, কর্মপরিকল্পনা আর তার বাস্তবায়ন! প্রতিদিন আমরা যেই বিপুল পরিমাণ সময় অযথা নষ্ট করি সেটাকে কমিয়ে আনলেই দেখবেন ২৪ ঘন্টা আসলে কত বড়। একূল-ওকূল সামলে চলতে গিয়ে ডুবতে হবে না আর আপনাকে। 

 







৮।নাছােড়বান্দার মত লেগে থাকা 


 “জে. কে. রাওলিং” হ্যারি পটারের প্রথম বইটি নিয়ে ১৩ জন প্রকাশকের দ্বারে-দ্বারে ঘুরেছিলেন, কেউই বইটি ছাপাতে রাজি হয়নি! মুখের উপর বলে দিয়েছিল, “এইসব ছাইপাঁশ কেউ পয়সা খরচ করে পড়বে না কোনদিন। জ্যাক ম “ হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ বার আবেদন করেও প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন। এমন আরাে অজস্র গল্প নিশ্চয়ই জেনে থাকবেন। সবখানেই একটা ব্যাপার লক্ষণীয়, যে তাঁরা যা করবেন পণ করেছিলেন, সেটা শেষ পর্যন্ত করে ছেড়েছেন। এখানেই কিন্তু তাঁদের সাথে সাধারণ মানুষের তফাৎ। কারণ, সাফল্যের ২টা না ৩টা না, ১ টাই উপায়। সেটা হচ্ছে নাছােড়বান্দার মত লেগে থাকা, কামড়ে ধরে থাকা, ঝুলে থাকা। 









৯। সবাই মিলে কাজ করা 


আপনি একা-একা বেশ দ্রুত আগাতে পারবেন, কিন্তু বেশিদূর আগাতে পারবেন না। আর সবাইকে নিয়ে আগালে হয়তাে যাত্রাপথে হোঁচট খেতে হবে একটু বেশি, কিন্তু একজন আরেকজনকে সাহায্য করবে বিপদের মােকাবিলায়, বন্ধন হবে অনেক দৃঢ়, এগােতে পারবেন বহুদূর। তাই সফল মানুষরা সবসময় সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যেতে চান। মানুষের মুখে হাসি ফোটানাের যে তৃপ্তি তার কি কোন তুলনা চলে? 










১০। কাজে নেমে পড়া 


আপনার মাথায় অনেক বুদ্ধি গিজগিজ করছে, কিন্তু যতক্ষণ না সেটা খাটিয়ে আপনি বাস্তবে কিছু করছেন, ততক্ষণ মানুষ কিন্তু জানবে না আপনার সুপ্ত প্রতিভার কথা। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অপচয় এই প্রতিভার অপচয়। জীবনে যদি চ্যালেঞ্জই না থাকে তাহলে সেটা কিসের জীবন? নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন প্রতিনিয়ত। কিছু করার সবচেয়ে ভাল সময় হচ্ছে “এখন”। তাই “কিভাবে হবে” না ভেবে এখনই নেমে পড়ুন কাজে, বিশ্বাস করুন ঠকতে হবে না আপনাকে। সফল মানুষরা এভাবেই যে নাম লিখিয়েছেন সফলদের কাতারে।

1 Comments

Please Validate The Captcha

Previous Post Next Post