উত্তম ব্যাক্তি বা মানুষ কে ( এই প্রশ্নটিই আমাদের সবার মাথায় ঘুরপাক খায় )



ক্লাসে প্রসঙ্গক্রমে শিক্ষককে জিজ্ঞেস করলাে শাকিল-হুজুর, মানুষদের মধ্যে সব চেয়ে জ্ঞানী ও উত্তম মানুষ কে? আমরা তাকে চিনবো কি করে?' মৌলভী শিক্ষক আশরাফ আহমদ বললেন-“যারা বিভিন্ন নেক কাজ করে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হয়েছেন তারাই হলেন জ্ঞানী ও উত্তম মানুষ। তবে এমন মহৎ মানুষকে খুব সহজে চেনা সম্ভব নয়।


কেননা প্রকৃত নেককার বান্দা আপন পূন্যের কাজগুলাে সবার থেকে আড়ালে রাখতে চেষ্টা করেন। আর যিনি নেককার বান্দা হিসেবে সবার কাছে পরিচিত হতে চান তিনি আল্লাহর কাছে কতােটুকু প্রিয় হতে পারেন তা বলা কঠিন। কেননা অনেক সময় রিয়া বা লােক দেখানাে এবাদত বান্দার সব পূন্য নষ্ট করে দেয়। সে মানুষদের কাছে ঠিকই নেককার মানুষ হিসেবে খ্যাতি পায় কিন্তু আল্লাহর নিকট বদকারের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। তখন এ ব্যক্তিকে সবচেয়ে মূর্খ হিসেবে ধরে নেয়া যায়। 


হুজুরের কথাগুলাে শাকিলের কাছে বেশ জটিল মনে হলাে। সে আবার জিজ্ঞেস করলাে-‘একটি উদাহরণ দিয়ে বললে অনেক ভাল বুঝতে পারতাম। বেশ জটিল লাগছে হুজুর।মাওলানা আশরাফ আহমদ দেখলেন ব্যাপারটি নিয়ে শাকিলের বেশ আগ্রহ আছে । ক্লাসের অন্য শিক্ষার্থীরাও বেশ মনােযােগের সাথে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। তাই তিনি একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি বুঝানাের চেষ্টা করলেন। 


বললেন-একবার হযরত মুসা (আ.)-কে জিজ্ঞেস করা হলাে যে, এই যুগে সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি কে? হযরত মুসা (আ.) আল্লাহর নবী। মানুষদের মধ্যে নবীরাই সবচেয়ে জ্ঞানী ও উত্তম মানুষ হয়ে থাকেন ।নবীর চেয়ে অন্য কেউ বেশী জ্ঞানী হবে এটা কখনাে যুক্তিসঙ্গতও নয়। তাই হযরত মুসা (আ.) সহজ-সরলভাবে, বললেন-আমিই সর্বাধিক জ্ঞানী । নবীর এই কথাটি আল্লাহর পছন্দ হলাে না। কেননা আল্লাহ চাচ্ছিলেন। মুসা (আ.) এভাবে বলবেন-‘সর্বাধিক জ্ঞানী ব্যক্তি কে এটা আল্লাহ-ই ভাল জানেন। তাই হযরত মুসা (আ.)-কে কথাবার্তায় আরও সতর্কতা অবলম্বনের জন্য আল্লাহ তাকে একটি ঘটনার  মুখোমুখি করেন।


ঘটনাটি হলো,জ্ঞানকে আল্লাহর দিকে সোপর্দ না করার কারণে আল্লাহ তাকে তিরস্কার করে বললেন, 'দু’সাগরের সঙ্গমস্থলে আমার এক বান্দা আছে, যিনি তোমার চেয়ে অধিক জ্ঞানী ।' 


হযরত মূসা (আ.) বললেন- হে আমার প্রতিপালক! তার নিকট পৌছতে কে আমাকে সাহায্য করবে, আমি কিভাবে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে পারি?' তখন বলা হলাে, “তুমি একটি থলিতে করে একটি মাছ নাও । যেখানে তুমি মাছটি হারাবে, সেখানেই আমার সে বান্দা আছে।'


অতঃপর হযরত মুসা (আ.) একটি মাছ ধরলেন এবং থলিতে রাখলেন। মাছ নিয়ে তাঁর সঙ্গী ইউশা বিন নূনকে সাথে নিয়ে যাত্রা শুরু করলেন। পথ চলতে চলতে তারা একটি পাথরের কাছে পৌছলেন এবং তার উপর মাথা রেখে বিশ্রাম নিলেন । হঠাৎ মূসা (আ.) ঘুমিয়ে পড়লেন।


এ সময় মাছটি থলি থেকে বের হয়ে লাফিয়ে সমুদ্রে চলে গেল। অতঃপর সে সমুদ্রে সুড়ঙ্গের মত পথ করে নিল। আর আল্লাহ মাছটির চলার পথে পানির প্রবাহ থামিয়ে দিলেন। ফলে তার গমনপথটি সুড়ঙ্গের মত হয়ে গেল। ঘুম থেকে জেগে তারা উভয়ে অবশিষ্ট রাত এবং পুরাে দিন পথ চললেন ।


পরদিন সকালে হযরত মূসা (আ.) তার সাথীকে বললেন- “আমরাতাে সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি, আমাদের খাবার নিয়ে এস।' হযরত মূসা (আ.)-কে আল্লাহ যে স্থানে যাবার কথা বলেছিলেন, সেই স্থান অতিক্রম করার পূর্ব পর্যন্ত তিনি কোনরূপ ক্লান্তিবােধ করেননি। 


সাথী ইউশা বিন নুন তখন বলল- “যে পাথরটির নিকট আমরা বিশ্রাম নিয়েছিলাম সেখানেই মাছটি অদ্ভুতভাবে সমুদ্রের মধ্যে চলে গেছে। কিন্তু আমি মাছটির কথা আপনাকে গিয়েছিলাম । মূলত: শয়তানই আমাকে এ কথা ভুলিয়ে দিয়েছে।


হযরত মূসা (আ.) বললেন- “আমরা-তাে  সেই স্থানটিরই অনুসন্ধান করছি। অতঃপর তারা তাদের পায়ের চিহ্ন ধরে পিছনের দিকে ফিরে চললেন এবং ঐ পাথরের নিকটে পৌঁছে দেখলেন, এক ব্যক্তি কাপড় মুড়ি দিয়ে বসে আছেন। আসলে তিনি ছিলেন হযরত খিজির (আ.)। মূসা (আ.) তাঁকে সালাম দিলেন। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন- 'এখানে সালাম কি করে এলাে?


তিনি বললেন, 'আমি মূসা।' খিজির (আ.) জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি বনী ইসরাঈল বংশীয় মূসা? মূসা (আ.) বললেন-

“হ্যাঁ। আমি এসেছি এজন্য যে, সত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে, তা হতে আপনি আমাকে শিক্ষা দিবেন। খিজির (আ.) বললেন-হে মুসা! আমার আল্লাহ প্রদত্ত কিছু জ্ঞান আছে, যা আপনি জানেন । আর আপনিও আল্লাহ প্রদত্ত এমন কিছু জ্ঞানের অধিকারী, যা আমি জানি না । 


মূসা (আ.) বললেন-“আমি কি আপনার সাথী হতে পারি?' খিজির (আ.) বললেন, 'আপনি আমার সাথী হলে কিছুতেই ধৈর্যধারণ করতে পারবেন না। যে বিষয় আপনার জ্ঞানের আওতাধীন নয় সে বিষয়ে আপনি ধৈর্যধারণ করবেনই-বা কেমন করে? মূসা (আ.) বললেন-'ইনশাআল্লাহ, আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন এবং আপনার কোন আদেশ আমি অমান্য করবাে না ।


অতঃপর তাঁরা দু'জনে সমুদ্রের কিনারা ধরে হেঁটে হেঁটে চললেন। তারা নৌকায় চড়ে যেতে চাইলেন। একটি নৌকা তাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। তাদেরকে নৌকায় তুলার জন্য দু জনে অনুরােধ করলেন। নৌকার মালিক খিজির (আ.)-কে চিনতে পেরে ভাড়া ছাড়াই তাঁদেরকে নৌকায় তুলে নিলো। 


যখন তাঁরা দু’জনে নৌকায় চড়লেন, তখন একটি চড়ুই পাখি এসে নৌকাটির কিনারায় বসল এবং সমুদ্র থেকে এক ফোঁটা বা দুই ফোঁটা পানি পান করল । খিজির (আ.) বললেন-“হে মুসা! আমার ও আপনার জ্ঞানের দ্বারা আল্লাহর জ্ঞান হতে ততটুকুও কমেনি যত টুক এ পাখিটি তাঁর ঠোটের দ্বারা সাগরের পানি হ্রাস করেছে’ । (আরো আছে)


Post a Comment

Please Validate The Captcha

Previous Post Next Post